Friday, October 22, 2010

আইপিওর আইনি শর্ত শিথিল করায় শেয়ার সরবরাহ বাড়বে


বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার ছাড়ার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজরে শেয়ার সরবরাহের পথ কিছুটা হলেও প্রশস্ত হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা এসইসির এ সংশোধনীকে স্বাগত জানালেও একই বিষয় নিয়ে বারবার নীতি পরিবর্তনেরও সমালোচনা করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) গত বৃহস্পতিবারে সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশ্লেষকরা এসইসির ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারে কম মূলধনের ছোট কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির পথ সুগম হবে। বাজারে বিদ্যমান চাহিদার বিপরীতে দ্রুত শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবীদ আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে আগে যে ৪০ কোটি টাকার শর্ত ছিল তা সঠিক ছিল না। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কম মূলধনের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে আর কোন বাধা থাকলো না। এর ফলে এপোলো হাসপাতাল ও ইউনিক হোটেল শেয়ারবাজারে আসতে পারবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, একটু দেরিতে হলেও এসইসি একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও আগে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে অনেক ভালো হতো। বিষয়টি অবশ্যই শেয়ার সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে আইপিওর ক্ষেত্রে মূলধন সম্পর্কিত কোনো শর্তই থাকা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট যেভাবে আছে, সেভাবে ফেলে না রেখে এটি সত্যিকার অর্থে কার্যকর করা দরকারও বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট মূলধনসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন প্রধান বোর্ডের পরিবর্তে দ্বিতীয় বোর্ডে করা যেতে পারে।

এসইসির মতে, এ সংশোধনীর ফলে বিভিন্ন কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা ছিল, তা দূর হবে। ফলে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। আবার স্বল্প মূলধনের কোম্পানিকে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে নিরুৎসাহিতও করা যাবে।

গত বৃহস্পতিবারের এসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোন কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে চাইলে ওই কোম্পানির ন্যূনতম মূলধন এখন থেকে ৩০ কোটি টাকা হতে হবে, যা আগে এই সীমা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর ফলে শেয়ারবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে মূলধনের সীমা আরও ১০ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হলো। অন্যদিকে এ সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানিটিকে কমপক্ষে ১২ কোটি টাকার শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত শেয়ারের পরিমাণ কোম্পানির মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের কম হতে পারবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত কোনো উদ্যোক্তাই চাইবে না, বেশিসংখ্যক শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে চলে যাক। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, ১৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের নিচে আর কোনো কোম্পানি বাজারে আসছে না।

জানা যায়, এসইসি চলতি বছরের ১১ মার্র্চ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের ব্যাপারে কিছু শর্তারোপ করেছিল। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে চাইলে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন (বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত মিলে) ৪০ কোটি টাকা হতে হবে। আর ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধনের (আইপিওসহ) ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ শেয়ার জনসাধারণের কাছে বিক্রি করতে হবে। মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে হলে বাজারে ছাড়তে হবে ২৫ ভাগ শেয়ার। আর ১৫০ কোটি টাকার বেশি মূলধনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করা যাবে। ১৫০ কোটি টাকার কম মূলধনের (আইপিওসহ) ক্ষেত্রে কোনো প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট থাকতে পারবে না। ডিএসইর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সুপারিশের আলোকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এসইসি।

এসইসির ওই সিদ্ধান্তটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেন। তাদের মতে, ওই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে বিরাজমান শেয়ার সংকট আরও তীব্র হবে। তারা এসইসির ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের তাগিদ দেন। গত ১১ আগস্ট অনুষ্ঠিত এসইসির পরামর্শক কমিটির বৈঠকেও একই অভিমত প্রকাশ করে ন্যূনতম মূলধনের সীমা ২৫ কোটি টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞদের ওই পূর্বভাসই সত্য প্রমাণ করেছে।

অন্যদিকে এমন উদ্ভট শর্তের কারণে এবং এসব শর্ত পূরণ না হওয়ায় বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইপিওর প্রস্তাব ঝুলে যায়। দুটি কোম্পানির প্রস্তাব ফিরিয়েও দেয়া হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়, যাতে এসইসির এসব আইনি শর্তই শেয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণে শর্তগুলো শিথিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এদিকে মূলত যে ডিএসইর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসইসি এমন অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেই ডিএসই ন্যূনতম মূলধনের সীমা কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে। এসব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্ত আগের অবস্থান থেকে সরে আসে এসইসি।

এমএম মাসুদ

No comments:

Post a Comment